এইসব ব্যস্ততা


ছোটখাট কিছু লিখতে ইচ্ছে করছে। অভিমান কিংবা নেহাৎ জমা থাকা কিছু বিষাদের কথা। প্রতিদিন কতশত কথা বলা হয়, শোনা হয়, বুঝতে চেষ্টা করা হয়, কিংবা কেবলই এড়িয়ে যাওয়া হয়, তার থেকে দুটো শব্দ সাজিয়ে দিতে চাই।

ফেসবুকে গতকাল একজনের বিষাদ-কণ্ঠ শুনলাম। কারণটা আমার মতই, সময় চেয়েও না পাওয়া। আমি ঠিক জানি না, সবার মাঝেই এই বিষাদটা কাজ করে কি না। করলেও তার মাত্রাভেদের ঠিক কতটুকু পার্থক্য হয় যে, ওপাশের মানুষটির এই হতাশা আমাদের স্পর্শ করে না? নাকি এটা কেবলই কৈশোর থেকে তারুণ্যে পা দেবার সময়কার কিছু কুয়াশা, যা কেবলই দ্বিধান্বিত করতে চায় প্রিয় মানুষদের নিয়ে? জানা নেই! কিচ্ছু জানা নেই!

তবে আমি ভেবে নিয়েছি আমি কখনও ব্যস্ত হবো না। অবশ্য আমি ব্যস্ত হলেও কারো কিছু এসে যাবে বলে মনে হয় না। যে যখন যেভাবে চেয়েছে, সেভাবে তার সহযাত্রী হতে চেয়েছি। বিনিময় চাইনি। চেয়েছিলাম শুধু বছরে অন্তত তিনটে দিন প্রশ্ন করুক, ‘কেমন আছিস?’

এসব নেহাৎই বাতুলতা। এখন বুঝি। এখন জানি, কিভাবে এড়িয়ে যেতে হয় সবকিছুকে। কিভাবে ‘না’ বলতে হয়। কিভাবে বলা যায়, ‘পারবো না’। সাথে শিখে নিয়েছি ‘দুঃখিত’ বলবার সময় কণ্ঠ কিভাবে কৃত্রিমভাবে অনুতপ্ত করে তুলতে হয়। বেঁচে থাকার জন্যে এসবের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

দুর্ঘটনার পরে প্রথমবার খুব খাটুনি গেল গত পরশু। আমার মাছবন্ধুদের ঘরবাড়ি সাজালাম নতুন করে। প্রচণ্ড ব্যস্ত হয়ে পড়বো সামনের কিছু দিন। ওপরের শব্দমালার সাথে ব্যতিক্রম? নাহ, প্রিয় মানুষদের জন্যে আমার সময়ের কখনই অভাব হবে না। আমি কক্ষণোও ব্যস্ত হবো না।

আগে খুব ভাবতাম এসব নিয়ে। এখন কেবলই হাওয়ায় উড়িয়ে দিই এইসব জমা থাকা বিষাদ। অবহেলার প্রত্যুত্তর দিতেও ইচ্ছে করে না। মাঝেমধ্যে কাঠপুতুলকে শোনাই। যখন খুব বেশি বিষাদ জমে যায়, তখন। ব্যস্ত মানুষদের এত কিছু শুনবার সময় কোথায়? শোনাবারও ইচ্ছে নেই…

খুব অল্প সময়ের ব্যবধানের মানুষ খুব বদলে যায়। কেবল আমাদের মত কিছু বোকামানুষেরা বদলাতে পারে না। ক্ষতবিক্ষত খোলসে মুখ লুকিয়ে বদলে যাওয়াদের এই পরিবর্তনকে ভিন্নভাবে দেখতে চায়। ন’ সেদিন আমার হুটহাট ঘুমাতে যাওয়া দেখে বলে ফেলল, ‘তুই ত দিন দিন রোবোটের মত হয়ে যাচ্ছিস! যখন তখন সুইচ বন্ধ করে দিস!”

আমার চেনা পরিচিত মানুষেরাও এমন হয়ে যাচ্ছে। রোবোটের মত। প্রয়োজনের সময় মায়ার বাঁধন ছেড়ে ছুটে পালাচ্ছে। বাঁধনটা কি বোঝার মত বোধ হয় তাদের? আমি কবে এমন করে বাঁধন ছিঁড়ে যাওয়া শিখবো? কবে?

পাপে-পুণ্যে এ পৃথিবী, এই প্রাণ তারচে অধিকে ।
আমি আছি, তুমি নেই–,এইভাবে দু’জন দু’দিকে
অপসৃত; -তাই তো নশ্বর নারী কবির বিশ্বাসে,
ভালোবেসে যাকে ছুঁই, সেই যায় দীর্ঘ পরবাসে…।

-নির্মলেন্দু গুণ

যাকে উদ্দেশ্য করে লিখলাম, তার চোখে পড়বে কি?

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান