এইসব ভেবে ভেবে…


p { margin-bottom: 0.08in; }

::ব্যস্তকথন::

আমার সবচেয়ে প্রিয় কাজ যখন ভীষণ রকম ব্যস্ততা এসে ঘিরে ধরে, তখন সব ফেলে নিজের পছন্দের কোন কাজে মেতে থাকা। ব্যস্ততার কাজগুলো শেষ করাটা যতটাই গুরুত্বপূর্ণ হোক না কেন, আমি সব ফেলে কানে হেডফোন চাপিয়ে টেইলর সুইফট কিংবা এ্যাভ্রিল কিংবা রবীন্দ্র সংগীত আর তপুর গানের মাঝে হারিয়ে যাই। ব্যস্ততা দু একবার এসে আমাকে তাড়া দিয়ে যায়। আমি বিরক্ত হয়ে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিই তাকে। সে বেচারাও উপায়ান্তর না দেখে চলে যায়।

বিস্তারিত পড়ুন

নিশীথিনীর দিনলিপি-১২


p { margin-bottom: 0.08in; }

প্রত্যেকবার এক্সামের সময় অনেক কিছু গুছিয়ে রাখি। এক্সামের পর এটা করব, ওটা করব। আর দশজনের মতই করা হয় না। এক্সাম শেষের দিনটায় এসে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কম্পিউটারে কাটিয়ে দিই দীর্ঘসময়, ক্লান্তি জমা করি সর্বোচ্চ যতটুকু পারা যায় । তারপর সন্ধ্যেয় বিছানায় ঠেলে দিই নিজেকে। প্রায় একমাসের ক্লান্তি এক রাতে কাটিয়ে দিতে চেষ্টা করি। ঘুম ভাঙে মাঝরাতে। সব বইপত্র অন্তত তিনটে দিনের জন্য ড্রয়ারবন্দি করে রাখি প্রথমেই। রংতুলি নিয়ে বসি। দুটো একটা আঁচড় দিয়ে অনভ্যাসের দাসত্ব মেনে নিয়ে সরিয়ে রাখি সেগুলোও। গান শুনি। অন্ধকারে হাঁটি। জানলা দিয়ে সোডিয়াম আলোয় সাঁইসাঁই করে ছুটে যাওয়া গাড়িগুলো দেখি। দু একটা উদ্ধতের মত বিকট শব্দে ঘুমন্ত, ক্লান্ত নগরবাসীর ঘুমে ছেদ টেনে দিতে চেষ্টা করে। আমি পুরনো বাঁশির সুরটা শুনতে চেষ্টা করি। বহুবছর ধরে এই বাঁশির সুরটা শুনে আসছি। হয়তবা কোন শ্রমজীবী মানুষের দিবারাত্রির গল্প মেশানো থাকে তাতে। আমি ইটকাঠের স্তুপে বসে, প্রাচুর্যে দিন কাটিয়ে সেই গল্প মেশানো সুরের রহস্য উদঘাটন করতে পারি না। খানিকটা বিষণ্ণতা এসে ঘিরে নেয়। ভাবনাচিন্তার রাজ্যে বাধাহীন পদচারণা শুরু হয়। শুরু হয় নিয়মহীন জীবনযাপন।

মাঝেমাঝে নিজের এই অনিয়ম নিয়ে ভাবি খুব। এমন তো ছিলাম না কখনও। বছর দুয়েক আগেকার নিমগ্ন ভোর কিংবা ক্লান্ত অপরাহ্ন, মৌন বিকেল, আশাজাগানিয়া রাতকোথায় হারালো?

সময় খুব দ্রুত চলে যাচ্ছে। এখনও মনে পড়ে সেইদিনই তো তীব্র অভিমানে সবকিছু শেষ করে দিতে চেয়েছিলাম। সবাই চায়। বয়সটাই এমন। বয়সও বাড়ে খুব দ্রুত। সামিলকে দেখি বিস্ময় নিয়ে। মনে হয় মাত্র দুটো বছর পেরিয়েছে তার। ছোটবেলায় সামিলকে কোলে করে ঘুম পাড়ানো, বিকেলে খানিকক্ষণ ছাদে ওকে হাঁটানো, আঙুলে গুনতে শেখানো কিংবা কান্না থামানোর চেষ্টা। প্রচুর পেটাতাম সেই সময়। ছিলও সেইরকম দুষ্টু। ক্ষতিকরভাবে দুষ্টু। ড্রয়ারে কলমগুলো পেতাম না, স্কুলের বইতে লালনীল মার্কারের দাগ কিংবা অঙ্ক খাতার পাতাগুলো আড়াআড়িভাবে ছেঁড়া। মা বারণ করত। এখন বলে, সামিল অন্য যে কারো চেয়ে আমাকে বেশি মানে। আমিও খুশি হয়ে উঠি। তার দু একটা প্রমাণ পাই, যখন সামিল তার বিচিত্র সব প্রশ্ন নিয়ে আমার কাছে হাজির হয়, স্কুল থেকে এসে টেবিলে এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানি দেখতে পাই অপেক্ষমান কিংবা এয়ারকুলারটা আগেই অন থাকে। আপু আসবে বলে।

ভালোবাসা কি অদ্ভুত একটা জিনিস, না!? বাচ্চারা বেশিরভাগ সময় এত তীব্রভাবে এর প্রকাশ ঘটিয়ে ফেলে, লজ্জায় পড়ে যাই। ছোট্ট ছোট্ট পরী আর দেবদূত একেকজন

বহুদিন বাদে স্কুল খুলবার জন্যে অপেক্ষা করছি। স্বীকার করতে লজ্জা নেই, নিজের স্বার্থেই। উদয়নে দীর্ঘ ১১টা বছর কাটিয়ে ফেললাম দেখতে দেখতে। মনে পড়ে সেইদিনই এলাম এখানে। প্রায়ান্ধকার দিন ছিল সেদিন। ফার্স্ট বেঞ্চটা দখল করে বসলাম। লম্বা লম্বা বেঞ্চ, বিশালাকার বোর্ড, সাজসজ্জাহীন ক্লাসরুম, “বন্ধু হবে আমার?” বলতে না পারাই বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে হঠাৎই বন্ধু হয়ে যাওয়া, বছরদুয়েক পরে সেই বন্ধুত্বের পতন, নতুন বন্ধু আসা, আবার যাওয়া, আবার আসা, আবার যাওয়া……

কতগুলো দিন পেরিয়ে গেছে এভাবে। আরও অনেকদিন হয়ত এভাবেই পেরোবে। অনেক মানুষ আসবে, দু একজন থেকে যাবে, তাদের হয়ত হারিয়েও ফেলব অবহেলায়তুবার মত।

তুবাকে আমার মনে হয়ত চাইনিজদের মত। কাঁধ পর্যন্ত স্ট্রেইট চুল, চোখে হালকা চশমা আর সবসময় মুখে লেগে থাকা হাসি। কখনই কেন যেন আমার খুব অসাধারণ মনে হয়নি মেয়েটাকে। চোখের দোষ আমার। মুক্তো ভেবে শিশিরকণাই দেখি সবসময়
একদিন ক্লাসে এসে ভেউ ভেউ করে কাঁদছিল। সবাই জিজ্ঞেস করছিল কান্নার কারণ। আমি তখন পড়া নিয়ে ব্যস্ত। মানুষের ঠুনকোঅনুভূতি আমাকে স্পর্শ করত না একেবারেই

তুবা স্কুল ছেড়ে গিয়েছিল ২০০৬ এ। এ ঘটনার এক বছর পরে। দুর্ভাগ্যক্রমে জানতে পেরেছিলাম সেই বৃত্তান্ত। স্কুল ছুটির সময় তুবা কি একটা কথা বলতে চেয়েছিল, আমি বরাবরের মত তাড়ায় থাকায় আমার শোনা হয়নি, স্রেফ এড়িয়ে গিয়েছিলাম তাকে। সেই অভিমানেই তার সেই অশ্রুবর্ষণ।

এরকম করে কত সোনার মানুষকে হারিয়েছি, তার হিসেব নেই কোনো। আর কত হারাবো, তারও কি আছে হিসেব? শিশিরকণা কি স্থায়ী হয় বেশিক্ষণ? আমি যে শিশিরকণাকেই মুক্তো ভেবে ছুটি তাকে ধরে রাখতে….

নিশীথিনীর দিনলিপি-১১


p { margin-bottom: 0.08in; }

ষোল বছর একদিকে যেমন অনেক সময়, তেমনি বয়সের হিসেবে তা অনেক কম। বয়স নিয়ে মানুষের শঙ্কা কম নয়। ছোট থাকতে ভাবতাম, এমন যদি হত, পৃথিবীর এ পর্যন্ত লেখা সব বই পড়ে ফেলব আস্তে আস্তে। তখন বই বলতে ভাবতাম শুধু রূপকথা। জগতটা ছিল ক্ষুদ্র। ক্রমে ক্রমে একদিন যখন হঠাৎ আবিষ্কার করলাম, জগতের সব বই পড়ে ফেলা সম্ভব না, মনটা এক অন্যরকম অনুভূতিতে আক্রান্তহয়ে পড়েছিল। অনুভূতিটার নাম ক্ষুদ্রতা।
তিনটা অক্ষর, তার মাঝে দুটো যুক্তাক্ষরঘটিত অক্ষর; শব্দটার গঠনই যেন এর জটিলতাটা দেখিয়ে দেয়। অসংখ্যবার এই অনুভূতিটা আক্রান্ত করেছে। এই অনুভূতির ভয়ে রাতের পর রাত না ঘুমিয়ে বইপত্রে মুখ গুঁজে বসে থাকতাম। যখনই ক্লান্তি এসে চেপে ধরত, চোখের সামনে হাস্যরত প্রতিদ্বন্দ্বীর মুখটা ভেসে উঠত। কাল্পনিক ব্যঙ্গবিদ্রূপগুলো যেন স্পষ্ট শুনতে পেতাম। দ্রুত ক্লান্তি সরিয়ে পড়ায় মন দিতাম।
তবু মাঝে মাঝে এড়াতে পারতাম না। পরাজয় খুব কম এসেছে আমার কাছে। ভাগ্য একেবারে খালি হাতে ফিরিয়ে দেয়নি কখনই। অল্প কিছু হলেও দিয়েছে। কিন্তু যখনই পরাজয়ের ছায়া দেখা দিত, সাথে সাথে আশেপাশের মানুষজনের বিদ্রূপে আমার মনোজগত ক্ষতবিক্ষত হয়ে উঠত। তাদের কথায় মনে হত, পরাজয় যেন কখনই আমার জন্যে নয়! ক্ষুদ্র সেই মনোজগতে জায়গা করে নিত ক্ষুদ্রতা নামের অনুভূতিটা।
মাঝে মাঝেই নিজেকে খুব ক্ষুদ্র হিসেবে আবিষ্কার করি। খুব চমৎকার কোনো মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে আবিষ্কার করি, আমার অন্ত:করণটা কতটা ক্ষুদ্র, কতটা সংকীর্ণ। ক্লাসের ফার্স্ট গার্লের সামনে দাঁড়িয়ে আবিষ্কার করি, বিষয়টা সম্পর্কে কত কম জানি। ধার্মিক কোন মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে আবিষ্কার করি, ধর্মকর্ম থেকে কতটা দূরে আমি। কিংবা শূন্য হাতের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের অক্ষমতা আবিষ্কার করি, আবিষ্কার করি, কতটা ক্ষুদ্র আমি। শিক্ষকের একটিমাত্র ইচ্ছেপূরণ হবে, কি চাইতে?” প্রশ্নের উত্তরে, “সবার সব ইচ্ছে যেন পূরণ হয়বলে নিজের ক্ষুদ্রতাটাকে উপলব্ধি করে ফেলি। কারও দীর্ঘদিন চেপে রাখা কথা শুনতে চেয়ে বলা যাবেনাশুনে নিজের সততা আর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে নিজেই সন্দিহান হয়ে যাই, নিজের ক্ষুদ্রতাকে আবিষ্কার করে বসি বারংবার।
আহ! এত ক্ষুদ্রতা কেন পৃথিবীতে!