দিনকাল: ২৫/২/২৪


১। 

আমাদের বাসার উল্টোপাশে বহুদিন ধরেই একটা বাড়ি উঠছে। এখানে সব বাড়িই মোটামুটি ছয় তলা। এটাও তেমন। আমি রোজ বারান্দায় গাছে পানি দিতে দিতে দেখি, বাড়িটায় টুকটুক করে কাজ হচ্ছে। কিছুদিন আগে দেখলাম, তিনজনের একটা ফ্যামিলি এলো ছয়তলায়। তার পর দিন থেকে ছয়তলার মাঝের দেয়াল ভেঙে ভেতরের ডিজাইনটা ভিন্নভাবে করা শুরু করলো। 

এই নিজের মতো করে সাজিয়ে গুছিয়ে একদম নিজের একটা বাসার ইচ্ছে আমার অনেকদিনের। অনেক অনেক পুরনো ইচ্ছে। সব মেয়েরাই হয়তো এমন ইচ্ছে পুষে রাখে। কেউ পারে, কেউ পারে না। 

আমরা আমাদের ছোট্ট ভাড়া বাসাটাই ঘুরেফিরে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখি। এরিকা পামের জন্যে বাঁশের ঝুড়ি আনি। দেয়ালের জন্যে পেইন্টিং আনি। অল্প কিছু শিকা আর কাঁচের বোতলে মানিপ্ল্যান্ট। 

মাঝেমধ্যে দীর্ঘশ্বাস ফেলি, যে, ইশ, হয়তো একদম নিজেদের বাসা কোনোদিন হবে না; আবার নিজেরাই বলি, যেমন আছি, বেশ আছি!

আজ দেখলাম, বাড়িটার কাজ শেষ হয়নি, কিন্তু তার আগেই ছাদে বড় বড় কিছু মুকুলসহ আমগাছ চলে এসেছে। 

দেখে আরেকদফা আফসোস শুরু হলো, আমাদের দুই বারান্দায় গাছের যে আর জায়গা হচ্ছে না! অথচ এখনও আমার মাধবীলতা বাকি, গ্যালাক্সি গ্লো-জুমেলিয়া বাকি, মাসুমের মালটা গাছ বাকি.. 

তারপর লিয়ানার হুটোপুটিতে সব চাপা পড়ে গেল। বেচারার অল্পস্বল্প সর্দি লেগেছে, মনমেজাজ বিশেষ ভালো নেই। 

২।

কিছুদিন আগে ২৯ পূর্ণ করলাম। কি অদ্ভুত, ৩০ এর শুরু হয়েই গেল! একটা সময় মনে হতো, ৩০ মানে মধ্যবয়স। তবে দেখি মধ্যবয়সেই পা ফেললাম। কিন্তু আমার নিজেকে এখনও অনেক অপরিণত-অপরিপক্ব বোধ হয়। বয়সের তুলনায় ধৈর্য-স্থৈর্য এখনও অনেক অনেক কম। মাসুম প্রথম দিককার তুলনায় অনেক বেশি শান্ত আর ধীরস্থির হয়েছে, কিন্তু আমি এখনও পারিনি। চাকরি করছি প্রায় আড়াই বছর। কিন্তু প্রায় পুরোটাই ওয়ার্ক ফ্রম হোম। এটা একটা সম্ভাব্য কারণ হতে পারে, কেননা, মানুষের সাথে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নেই। 

জিনিসটা খুব খারাপ হচ্ছে। সংখ্যায় শুধু বয়স বাড়লেই কি হয়! সেই সাথে বাড়তে হয় প্রতিক্রিয়া দেখানোর সময়। এসব এক্সকিউজ দেখিয়ে লাভ কি! 

৩। 

আমার প্রতিদিনই অফিস শুরু করার সময় মনে হয়, চাকরি ছেড়ে দিই৷ এই ভিন্নভাষী বকাবকানি শুনতে আর ভালো লাগে না। রাত জাগতেও আর ভালো লাগে না৷ যদিও জানি যে এটা ছেড়ে দেওয়া সম্ভব নয়, আর ছেড়ে দিয়ে বিকল্প যেগুলো পাবো, সেসবও আমার পছন্দ হবে না। কি অদ্ভুত এক দ্বন্দ্বে আটকে আছি! 

গুছিয়ে সংসার করার আনন্দ আছে, তৃপ্তি আছে৷ ম্যাটার্নিটি লিভের ছয় মাস, আর লিয়ানা হবার আগের ৭ দিনের মতো শান্তির সময় আমি কখনই কাটাইনি। দ্বিতীয়টা অবশ্যই বেশি শান্তির ছিল- সদ্য লিভ শুরু, কোনো কাজ নেই, বিকেলে ঘুরতে বের হচ্ছি, গাছের যত্ন করছি, রান্নাবান্না করছি। লিভের ছয় মাসে আমার রাতে ঘুমানোর অভ্যাস হলো৷ চাকরির শুরুতে পড়লাম বিপদে- এত সময় তো রাত জাগিনি প্রায় ৬ মাস। এখনও কষ্ট হয়। 

আমার সত্যিই আর কিছুই করতে ইচ্ছে করে না৷ 

সামনে কি প্ল্যান, কেউ জিজ্ঞেস করলে হাত নেড়ে উত্তর দেই, ‘ধুরর!’ 

শান্তিমতো ঘুমিয়ে উঠতে পারাটাই প্ল্যান। ওয়ান ডে অ্যাট আ টাইম!