‘উড়োস্বপ্ন’


শিরোনাম দিতাম ‘বসন্তদিনের গল্প’। কিন্তু এখন বর্ষা চলছে। বর্ষা? হুমম, বর্ষাই তো! এই ইটকাঠের শহরে ঋতুর পালাবদল বুঝবার উপায় একমাত্র পত্রিকা আর দেয়ালে ঝোলানো ক্যালেণ্ডার। শালিকের ডাক কিংবা পলাশের ক্রোধমাখা রক্তবর্ণ দেখবার কোনো উপায় নেই!

আর একঘণ্টা পর তিন ঘণ্টার পরীক্ষায় নামবো। কি বিচ্ছিরি বিরক্ত লাগছে, কেবল আমিই জানি। রোজ রোজ জীবনের পরীক্ষা দিতে দিতে ক্লান্ত আমি, এইসব ছাইপাশ লেখাজোকা, স্মৃতির পরীক্ষা দিতে ইচ্ছে করে না।

আজকেও শুনছি “Words I couldn’t say”। ভোরে সাড়ে চারটায় ঘুম ভেঙে প্রথমেই মাথায় উঁকি দিলো পটাসিয়াম ফেরোসায়ানাইড আর নেসলার বিকারক। প্রচণ্ড বিরক্তিতে মাথা ঘোরালাম তাদের তাড়া করে সরিয়ে দিতে। উলটো এ্যামোনিয়া কেন বিজারক আর ডি ব্লক মৌল কেন রঙিন যৌগ গঠন করে, সেসবের বিবরণ এসে ছুটোছুটি খেলতে লাগলো। অগত্যা উঠে বসলাম।

ইচ্ছে করে, কোনোদিন পরীক্ষার খাতায় লিখে দিয়ে আসবো, ডি ব্লক মৌলগুলো রঙিন সব স্বপ্ন দেখে বলে রঙিন যৌগ গঠন করে, আর এ্যামোনিয়া কেবলই অন্যের সখা’কে কেড়ে নিতে চায় বলে বিজারক…

পারবো না জানি। অত সাহস আমার নেই। পরীক্ষায় বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছিলাম এরকম একটা ক্লাসটেস্টেই। শেষ কেমিস্ট্রি ক্লাসটেস্টটায়। উত্তরগুলো প্রশ্নপত্রে মার্ক করে এসেছি, কিন্তু খাতায় লিখতে একদমই মনে নেই। দশটা নম্বর উড়িয়ে দিলাম বদ্ধ বাতাস আর দুশ্চিন্তামাখা রোদে…
উন্মাদ হয়ে যাচ্ছি দিন দিন। স্বাপ্নিক হচ্ছি। বাস্তবতা মিশে যাচ্ছে কুয়াশায়, আর আমি ছুটছি তার পেছন পেছন, তাকে ধরতে পারবো না জেনেও।

তবে যদি কোনোদিন নিশ্চিন্ত নির্ভার আশ্রয় পাই, তখন থামিয়ে দেবো এই ছুটে যাওয়া।

পুরনো আমার সাথে এখনকার আমাকে আর মেলাতে যাই না একদমই। পুরনো আমি ছিলাম বিজয়ী একজন, এই আমি পরাজিত, চরমভাবে পরাজিত। হৃদয়ের কথায় সাড়া দিতে নেহাৎই ব্যর্থ।
মাঝেমাঝে সবকিছু ফেলে বোধহয় অতিপ্রাকৃতিক বিষয়ে বিশ্বাস রাখতে হয়। সিমন নামের সেই ছেলেটা, যে কি না এত ভয়াবহ দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফিরে এসেছে, যদিও ভবিষ্যতে কী হবে, তার নিশ্চয়তা নেই। আমি তাকে চিনি না, সেও আমাকে চেনে না। অন্তর্জালের একজন নিয়মিত খবরাখবর প্রকাশ করে নিজ দেয়ালে, জেনে যাই তার অফুরান প্রাণশক্তির কথা। কিছু মানুষ কি অদ্ভুত প্রাণশক্তি নিয়ে জন্মায়! মৃত্যুকে পরাজিত করে ফিরে আসে প্রাণের মানুষের কাছে।

আমার আর কিছুই করতে ভালো লাগে না। অলস সবুজ দিন কাটাতে ইচ্ছে হয় শুধু। এই ইট কাঠের শহরে সবুজ কোথায় পাবো!

“পাখির শিশুর মতো যখন প্রেমেরে ডেকে ডেকে

রাতের গুহার বুকে ভালোবেসে লুকায়েছি মুখ —
ভোরের আলোর মতো চোখের তারায় তারে দেখে!
প্রেম কি আসে নি তবু? — তবে তার ইশারা আসুক!
প্রেমকি চলিয়া যায় প্রাণেরে জলের ঢেউয়ে ছিঁড়ে!
ঢেউয়ের মতন তবু তার খোঁজে প্রাণ আসে ফিরে!”
-প্রেম/ জীবনানন্দ দাশ

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান