বেলা প্রায় পড়ে এসেছে। দিন কয়েক ধরেই আকাশে মেঘের ভীষণ আনাগোনা। গুমোট আকাশ। এমন দিনগুলো আমার বরাবরই খুব খারাপ যায়, বিষণ্ণতা এসে মনের মাঝে ছায়া ফেলতে শুরু করে। আমি তখন কিছু একটা করতে করতে নিম্নস্বরে বলি, “ও মেঘমালা, একটু সরেই যাও না, ওই যে, তোমার পেছনে সুয্যি অপেক্ষায় আছে আমার..একটু সোনারোদ আসতে দাও গো মেঘমালা, একটু রৌদ্র আসতে দাও..” শৈশবে আকাশে মেঘ করলেই মা বলতেন এ কথা। আমি একরকম অদ্ভুত বিশ্বাস নিয়ে আকাশপানে চেয়ে থাকতাম, আর কিভাবে যেন দেখতে দেখতেই মেঘ কেটে যেত। আর এই যে, আমি, দিন কয়েক ধরে রোজ দুপুরেই ধীরেলয়ে বলে যাই কথাগুলো, কিচ্ছুই যেন হয়না। মেঘগুলো আরও যেন আমাকে বিদ্রূপ করতেই আমার বাড়ির ছাদে কিংবা জানালার কাছে এসে দাঁড়ায়।
হঠাতই যেন একটু একটু করে বিষণ্ণতার দেয়াল চুইয়ে পড়া জলকণাগুলো ঝরতে থাকে। আপ্রাণ চেষ্টায় জলকণাগুলোকে আটকে রাখতে রাখতে উঠে দাঁড়াই। জানালার ধারে আইভি লতার ধারে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে মেঘমালাগুলোকে আবার বলি, “ও মেঘমালা, একটু সরেই যাও না, ওই যে, তোমার পেছনে সুয্যি অপেক্ষায় আছে আমার..একটু সোনারোদ আসতে দাও গো মেঘমালা, একটু রৌদ্র আসতে দাও..” হাতের ওপর শীতল জলকণার স্পর্শ অনুভব করি হঠাত। সিক্ত আইভি লতার জল। কে জানে, হয়ত আইভি লতাও আজ মনে মনে একই কথা বলছে, “রৌদ্র আসতে দাও..”
মূহুর্তের নীরবতাটা দীর্ঘায়িত হতে পারত, আরও বেশি গভীর হতে পারত। যদি তীক্ষ্ণ কণ্ঠের আকাশ বাতাস বিদীর্ণ করা চিৎকারটা না আসত। আমি যেন মেঘগুলোকেও কেঁপে উঠতে দেখি সেই চিৎকারে। আমার দিন কয়েকের অনুরোধে যে মেঘ সামান্যতম পরোয়া করেনি, সেই মেঘগুলোই যেন এই অজানা মানুষের চিৎকারে কেঁপে ওঠে, খানিকটা সরে যায়, রৌদ্র এসে স্থান করে নেয় সেই শূন্যস্থানে। আমার বেশ খুশি হয়ে ওঠার কথা। রৌদ্র যে আমার এই বিষণ্নতার অবসান ঘটাবে, কিন্তু মনের এক কোণে কোথায় যেন দীর্ঘদিন ধরে জমা করে রাখা একরাশ দীর্ঘশ্বাস বের করে দেয়। অমন রোদ্দুর তো আমি চাইনি। যে রোদ্দুর একজন মানুষের মরণের নিষ্ঠুর আগমনধ্বনি শোনায়, অমন রোদ্দুর তো আমি চাইনি। কেমন যেন স্বার্থপর হয়ে গেছি আমি। জানালার কাঁচ সরিয়ে আসা, আইভি লতা ছুঁয়ে আসা নরম রোদ্দুরের লোভে আমি কিভাবে ভুলে যাই যে, রোজ এই রোদ্দুরের দেখা পাবার অর্থ একজন মানুষের শেষ নিঃশ্বাস….
@ফয়সাল ভাই, প্রশংসা আর উৎসাহের জন্য ধন্যবাদ অনেকগুলো। বইগুলোর ওপর রিভিউ, হুমমম, আইডিয়াটা আমিও ভেবেছি, কিন্তু বেশ ঘাঁটাঘাঁটি করতে হবে। এই লেখাটা শেষ হলেই দেখছি । থ্যাংকস!
উরিব্বাপ্স এই মেয়েটা এত্তো সুন্দর লিখে কী করে??!!!
অতীব সুন্দর হয়েছে শাহরিনা…
তোমার পড়া গল্পের বইগুলোর উপর রিভিউ করতে পারবা না? তোমার লেখা অনেক পরিপক্ক লাগে… কী পড়ে এইসব অর্জন করলা?? জানতে চাই……
@ফয়সাল ভাই, প্রশংসা আর উৎসাহের জন্য ধন্যবাদ অনেকগুলো। বইগুলোর ওপর রিভিউ, হুমমম, আইডিয়াটা আমিও ভেবেছি, কিন্তু বেশ ঘাঁটাঘাঁটি করতে হবে। এই লেখাটা শেষ হলেই দেখছি । থ্যাংকস!