এইসব গল্পেরা…


কাল রাত থেকেই অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছে। তার প্রতি অবহেলা দেখিয়ে পড়ায় মন দিলাম। প্রচুর পড়া জমে আছে। সেকেণ্ড সেমিস্টারের পরে কিছুতেই যেন মন বসাতে পারছি না। পড়াতে তো একেবারেই না। একটু পড়ার পরেই মাথা ধরে যায়। মাথা জিনিসটা ভারী অদ্ভুত। হৃদয় নিয়ে এত এত কাব্য হল, তবু দ্যাখো, মাথার ঐ ছোট্ট মাংসপিণ্ডটাই সবকিছুর নিয়ন্ত্রণে। এর মাঝে আবার বায়োলজি এনো না!

আজকাল রাতে আর ঘুম হয় না। একা একা জেগে থাকতেও কি ভয়াবহ কষ্ট! একসময় তো থাকতাম, কোনো অনুভূতিও হত না। বড় হতে হতে কতরকম অনুভূতি যে আমাদের মাঝে জন্ম নেয়! অবশ্য ব্যস্ত থাকি সারারাতই, জটিল কোনো সমীকরণ, গাছপালার ভেতরের অদৃশ্য সব কার্যকলাপ, রেডিয়ামের ক্রোধ বা অলিয়ামের দুষ্টুমির কারণ বুঝতে বুঝতে রাত পেরিয়ে যায়। কথা বলার মানুষ থাকলেও হয়ত তাকে সেভাবে সময় দিতে পারতাম না। আর জানোই তো, আমার এমনটা স্বভাব, কিছু পাওয়ার পরে তার প্রতি একেকসময় ভারি বিরক্ত লাগে!

রাতে মাঝেমাঝে ‘বড় হাতি’পুর সাথে কথা হচ্ছিল। স্বীকারোক্তি লেখাটা পড়ে বলল, আমি নাকি ডিম ফুটে বেরিয়ে আসছি! আমি ত ম্যাঁও, ডিমের ভেতর ঢুকলামই বা কিভাবে, আর বেরোলামই বা কিভাবে!

যাকগে, পরশু সন্ধ্যে থেকে প্রচণ্ড মাথাব্যথা হচ্ছিল। ভাবলাম পড়াশুনো নিয়ে দুশ্চিন্তায় হয়তবা। শেষে থাইরয়েডের ওষুধ খাওয়ার পরে দুই-ই সমাধান হল। আমি তাকে ছাড়তে চাইলেও সে আমাকে ছাড়বে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে হয়ত! সপ্তাহদুয়েক বাদ গিয়েছিল, এক্সাম আর পড়াশোনার ব্যস্ততায় ভুলেই গেছিলাম। মনে হচ্ছে, আজীবন এর ওপরে নির্ভর করে থাকতে হবে। মাঝেমধ্যে অন্য কোনো অসুখের ট্রিটমেন্ট নিতে গেলে সে একটু চোটপাট দেখিয়ে অল্টারনেটিভ ট্রিটমেন্ট করাতে বাধ্য করবে। দুরারোগ্য ব্যাধি যেন!

অবশ্য আমরা সবাই-ই কোনো না কোনোভাবে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত। কেউ ঈর্ষা, কেউ ক্রোধ, কেউ জেদ, কেউ ঘৃণা! এইসব অসুখের চিকিৎসা আছে কোনো?

বৃষ্টি থেমে আসছে। সারাদিন বৃষ্টি হলে বেশ হতো।

একটা সময় রোদ্দুরকে কি ভীষণভাবে ভালোবাসতাম! এখনও মনে আছে, এসএসসি দেবার সময়, এক্সাম শেষ করে ছায়ায় দাঁড়াইনি কোনোদিন, হালকা রোদ পড়ে, এমন জায়গায় দাঁড়িয়েছি। ছাতাকে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে দিয়েছি ব্যাগের কোণে। কেন যেন রোদ্দুর ভালো লাগতো খুব। এখন আর লাগে না। এমন ক্রুদ্ধ রোদ্দুর ভালো লাগে কারো? যদি আবার কখনও লক্ষ্ণী হয়ে আসে, তবে ভেবে দেখা যেতে পারে!

সকালে সুনীলের পূর্ব পশ্চিম পড়ছিলাম। শেষের দিকে এসে পড়েছি, উপসংহার চ্যাপ্টারটা পড়ছি। সুনীলের চরিত্রাঙ্কন আর কথোপকথনের কৌশলটা ভারি ভালো লাগে। তবে বলা বাহুল্য, প্রথম আলো পড়ে যতটা মুগ্ধ হয়েছিলাম, সেই সময় পড়ে তারচে কিছু কম, আর পূর্ব পশ্চিম পড়ে তারচে কিছু কম মুগ্ধতা এসেছে। তাই বলে ভেবো না, পূর্ব পশ্চিম বা সেইসময় তেমন ভালো না। আমার সাহিত্যজ্ঞান আসলে তেমন ভালো নয়। বুঝিও কম। পূর্ব পশ্চিম পড়ে অতীনের ওপর ভারি রাগ হয়েছে। এতটা নিষ্ঠুর কেমন করে হয় মানুষ!

ছোট্ট একরত্তি জীবন, তার মাঝে কত জেদ-অভিমান-ভুলবুঝাবুঝি! ‘বড় হাতি’পুও বলছিল কাল, ডিম ফুটে বেরোলেও আমার তেজ-জেদ সব একই রয়ে গেছে।

থাকুক। আমি জটিল কোনো মানুষ হতে চাই না। জেদ-অভিমানে বেলা কাটানো অবুঝই থাকতে চাই

বেঁচে থাকুক অভিমানেরা।

 

 

2 thoughts on “এইসব গল্পেরা…

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান