রাত্রিকালীন চিরকুট


প্রায় পুরো সপ্তাহই ক্লাস করলাম। ক্লাসের বিরক্তি কাটাতে আর সময়টা কাটাতে টিচারের চোখ এড়িয়ে প্র্যাকটিক্যাল লিখলাম লুকিয়ে লুকিয়ে। তৃতীয় দিন কাজ শেষ করে এত ক্লান্ত লাগছিল ব্যাগের ওপর মাথা রেখে আধঘুমে কাটিয়ে দিলাম প্রায় এক ঘণ্টা। আধঘুম বললাম যে মাঝেমধ্যে আধো আধো স্বপ্ন দেখছিলাম, আর সেসব স্বপ্নের অনুভূতিগুলো যে আমার মুখে ফুটে উঠছিল, সেটা টের পাচ্ছিলাম নিজেই। বারবার ঘুম তাড়িয়ে আবার নতুন করে ঘুম পাড়িয়ে নিলাম নিজেকে। বাসায় এসে ফ্রেশ হয়েও সেই আধো ঘুম। উপায় নেই যে। ম্যাথ আর কেমিস্ট্রির টিচারদের তাড়ায় পড়তে হবে।

Keith Urban এর গান শুনি। অদ্ভুত এক মায়া ছেলেটার গলায়, অদ্ভুত রকম এক আনন্দ। তার বিপরীতটা লাগে Greg Laswell এর গানে। তার গলায় বিষাদগুলো ফুটে ওঠে নিখাদ কারুকাজে। Poets of the fall শুনতে শুনতে ক্লান্ত হয়ে গেছি। Maroon 5 শুনতে চেষ্টা করেছিলাম কিছুদিন। দু একটা গান ছাড়া বিশেষ তেমন কিছু ভালো লাগেনি।

আপাতত বাজছে Brad Paisley এর She’s everything. গানের কিছু লাইন তুলে দিই, বিষাদজাগানিয়া শব্দমালার প্রতি আমার আকর্ষণ আজীবনের…

And she’s everything I ever wanted
And everything I need
I talk about her, I go on and on and on
‘Cause she’s everything to me

এত পরিপূর্ণ কেউ কি হয়? জানা নেই। আমি পরিপূর্ণ নই, বরং ঘুরিয়ে বলা যেতে পারে, আমি ভয়াবহভাবে শূন্য। রূপ-গুণের কিছুই পাইনি, কেবল কিছু এলোমেলো অনুভূতি নিয়ে ঘুরে বেড়াই এদিক সেদিক…

ন কে বলছিলাম আরেকটু বড় হলে চুপ করে পালিয়ে যাবো একা একাই। সেসব নিয়ে লম্বা চওড়া আলোচনা হল। অবাস্তব কল্পনার রাজ্যে বিচরণ করলাম অনেকটা সময়। বাস্তবের থেকে অনেক চমৎকার লাগছিল। সত্যিই, একদিন পালাতে ইচ্ছে করে। সব ছেড়ে। এই যে, আবারও অবাস্তব কল্পনার রাজ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছি।

এখন বাজছে Brad Paisley এর Remind me. প্রায় ফুল ভল্যুমে। কথোপকথনের মত করে গানটা গড়া। তিনটে লাইন দিই,

Now we keep saying that we’re okay
But I don’t want to settle for good not great
I miss the way that it felt back then I wanna feel that way again

কিছু কিছু অনুভূতিকে মাঝেমাঝে এত প্রচণ্ডভাবে মিস করি, তখন মনে হয়, আগে যদি জানা থাকতো এই অনুভূতিটা তখনই আমার শেষ পাওয়া, ন্যানোসেকেণ্ড পর্যন্ত সেটাকে অনুভব করতে চেষ্টা করতাম।

কত কিছু করা হয়নি জীবনে। বয়স বাড়ছে ক্রমান্বয়ে, যদিও প্রায় কুঁড়িতেই আছি। তবুও মজা লাগে মানুষজনের প্রশ্ন শুনে। পাপার অফিসের বারোটা পেপারওয়েট কিনতে গিয়ে বিক্রেতা প্রশ্ন করে বসে, ‘আপুর অফিস কোথায়?” জীবন শেষ হয়ে যায়নি জানি, তবুও মনে হয় এই বুঝি শেষ। কবে শেষ হবে জানি না, তবু একরাশ আফসোস নিয়ে বেঁচে থাকা। কতকিছু করিনি জীবনে! সমুদ্র দেখিনি, পাহাড়ের বুকে সবুজ দেখিনি, মেঘ ছুঁইনি। কেন যেন এসবের প্রতি এখন আর আকর্ষণ বোধ করি না। চুপচাপ ঘুমোতেই ভালো লাগে।

আপাতত আবার ঘুমোতে যাই। এক মগ কফি খেয়ে বসেছিলাম ঘুম তাড়ানোর আকাঙ্ক্ষায়। বিষাদের রাতে ঘুমের সাথে লুকোচুরি খেলতে ভালো লাগে না।

শুভ হোক রাত্রি। হোক সে বিষাদের, বা আনন্দের। বা অকারণ স্বার্থপরতার।

1 thoughts on “রাত্রিকালীন চিরকুট

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান